রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৭:১৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ফাতি : রূপকথার গল্পের নায়ক

ফাতি : রূপকথার গল্পের নায়ক

স্পোর্টস ডেস্ক: শিশু কালে গায়েনা বিসাউ শহরের মাঠে খেলা আনসু ফাতি মাত্র ১৬ বছর বয়সেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেছেন বার্সেলোনার ক্যাম্প ন্যু স্টেডিয়ামে। যেখানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ তারকাদের মতোই খেলেছেন তিনি।

লা লীগায় অভিষেক ম্যাচেই দুই মিনিটের মধ্যে গোল করে প্রেরণাদায়ক এক মৌসুম শুরু করেছেন ফাতি। ক্যাম্প ন্যু’র মাঠে পা দিয়েই ৮০ হাজারেরও বেশি দর্শকদের বিস্মিত করে তাদের সামনে যাদুকরি একটি রাত উপহার দিলেন তিনি। ফলে তার মাঠ ছাড়ার সময় ক্যাম্প ন্যুর উচ্ছসিত দর্শকরা দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানালেন এই বিস্ময়বালককে।
ফাতি যখন স্পেনের মাটিতে পা রাখেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৭ বছর। কিন্তু অসীম মেধার পরিস্ফুরণ ঘটিয়ে মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি সুযোগ পেয়ে যান বার্সেলোনার মর্যাদাপূর্ণ ইয়ুথ একাডেমী ‘লা মাসিয়ায়’।

দারিদ্র্য পীড়িত পশ্চিম আফ্রিকার একজন বালকের এই উত্থান যেন রূপকথার গল্পের মত। যা কখনো চিন্তাই করতে পারেনি ফুটবল বিশ্ব। সাও পাওলোর রাজধানী বিসাউর উপকন্ঠে উষ্ণ আবহাওয়ার বাদামী মাটিতে ছুটে বেড়ানো বালক আনসু ফাতি যে বার্সার খেলোয়াড় হবেন সেটিই কেউ কখনো ভাবতে পারেনি।

শিশুকালে ফাতিকে প্রশিক্ষণ দেয়া কোচ মালাম রমিসিও বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেন, শুধু মাত্র মোজা বা প্লাস্টিকের সেন্ডেল পরেই বলবান সতীর্থদের অনায়াসেই বল কাটিয়ে নিতে পারতেন ফাতি। তিনি যখন বার্সার মূল দলে অভিষিক্ত হন তখন বার্সা ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমিয়েছেন এই কোচ। তিনি বলেন, ‘ফাতি যদি এভাবে তার খেলাটি ধরে রাখতে পারে তাহলে একদিন অসাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন।’

বিশ্বের দরিদ্রতম এবং দূর্বল দেশ গায়েনা বিসাউয়ে ফাতি যেন গৌরবের উৎস। ২০০২ সালের ৩১ অক্টোবর জন্ম নেয়া এ ফুটবলার ছয় বছর পর্যন্ত কাটিয়েছেন বিসাউয়ে। যে চাচার ঘরে তিনি বাস করতেন সেই চাচা ফাতির একটি ঐতিহ্যবাহী জামা পরিহিত শিশুকালের ছবি দেখিয়ে বলেন, রুটি ও বাটারের প্রতি তার দূর্বলতা দেখে সবাই তাকে উত্যক্ত করত। তিনি বলেন, ‘ফুটবল খেলে ফেরার পর সে সব সময় ওই খাবারটাই খেতে চাইত।’

বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিবারটির পুনর্মিলন ঘটে স্পেনে
ফাতি যখন খুবই ছোট, তখনই তার পিতা বোরি ফাতি সিনিয়র কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান পর্তুগালে। পরে তিনি চলে যান স্পেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সেভিয়ায়। সেখানে তিনি নাইট ক্লাবে মদ ঢেলে দেয়ার কাজ থেকে শুরু করে দ্রুতগতির রেল লাইনের নির্মাণ কাজেও যুক্ত হয়েছিলেন। সেখান থেকে হেরেরায় বন্ধুত্ব হওয়া আমাদ ও সাবেদ্রা তাকে নিয়ে যান ১০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত মালাগায়। পরে পার্শ্ববর্তী শহর মারিনালেদার কম্যুনিস্ট মেয়র তার ড্রাইভার হিসেবে বোরিকে নিযুক্ত করেন। এর পর আর্থিক স্বচ্ছলতার দেখা পান তিনি। ফলে ২০০৯ সালে তিনি নিজের পরিবারের সদস্যদের সেখানে নিয়ে আসেন।

৫৩ বছর বয়সী সাবেদ্রা বলেন,‘ টি একটি দারুণ গল্প।’
বোরি হেরেরায় তার ছেলেকে পেলোটেরস ফুটবল স্কুলে ভর্তি করে দেন। স্কুলটি ওই শহরের হাজার হাজার শিশুদের বিনা মুল্যে প্রশিক্ষণ দেয়।

আমুদে তবে শান্ত
প্রথম স্প্যানিশ জর্ডি ফিগারোয় মরেনো বলেন, মাঠে এসেই দ্রুত চাঞ্চল্যের সৃস্টি করেন ফাতি। তিনি এএফপি’কে বলেন, ‘তার মধ্যে ছিল প্রকৃতিপদত্ত মেধা। ক্রীড়া শৈলী ও কৌশলগত দক্ষতায় তিনি সতীর্থদের বিশাল ব্যবধানে ছাড়িয়ে যান। শিশুদের মধ্যে দলগতভাবে খেলার দক্ষতা কমই থাকে। কিন্তু তার মধ্যে সব কিছুই ছিল।’
পেলোটেরোস স্কুলের পরিচালক হোসে লুইস পেরেজ মেনা বলেন, ফাতি যেমন ছিলেন খুব স্বতস্ফুর্ত, তেমনি আমুদে ও মিশুক। তবে খুবই শান্ত। নিজের সফলতাকে কখনো মাথায় রাখতেন না।’

স্পেনে আসার এক বছরের মধ্যেই ২০১২ সালে ১০ বছর বয়সে সেভিয়ায় যুক্ত হন ফাতি। সেখানেই বার্সেলোনার তরুন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। বার্সেলোনায় তার প্রথম কোচ মার্স সেরা বলেন, ‘লা মেসিয়ায় যুক্ত হওয়াদের মধ্যে আনসু ছিলেন সেরা তরুণ খেলোয়াড়দের একজন। যেদিন থেকে যুক্ত হয়েছেন সেদিন থেকেই তিনি ছিলেন আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এমন ধরনের খেলোয়াড় যারা ফুটবল আবিষ্কার করে।’

‘কল্পনাতীত’
আগস্টে গোল করে লা লীগায় বার্সেলোনার হয়ে কনিষ্ঠ গোলদাতার খেতাব লাভ করেন ফাতি। এই মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি বনে গেছেন ওই টুর্নামেন্টে ক্লাবের কনিষ্ঠ খেলোয়াড়। স্পেনের জাতীয় দলের কোচ রবার্তো মরেনো বার্সেলোনার হয়ে অভিষিক্ত এই তরুণ তারকাকে ‘কল্পনাতীত’ বলে উল্লেখ করেছেন। বার্সেলোনা কোচ আর্নেস্টো ভালভার্দে তাকে ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ বালক হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন,‘আমরা চাই নিজের সম্পর্কে সে আরো শিক্ষা গ্রহন করুক। প্রথম বিভাগ সম্পর্কে জানুক। তখন সে বুঝতে পারবে এটি কত কঠিন এবং সফলতার জন্য কতটা পরিশ্রম তাকে করতে হবে।’
গত মাসে স্পেনের ওন্ডা কেরো রেডিওকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ফাতির গর্বিত পিতা বলেছিলেন, তিনি চান তার ছেলে সম্মানিত হোক এবং সবাইকে মাতিয়ে রাখুক। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আমি তাকে বলি, তোমার কাজ হচ্ছে যখন বল পাবে তখন সেটিকে গোলে পরিণত করা। অন্য কোন দিকেই তাকাবে না, শুধু শট করবে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877